ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

বিয়ের নামে প্রতারণা: কলাতলীর তরুণী হাতিয়ে নিলো প্রবাসীর পৌনে ৪ লাখ টাকা

বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নস্থ কলাতলী আদর্শগ্রাম এলাকা সাদিয়া রহমান বৃষ্টি নামে এক তরুণী প্রতারণার মাধ্যমে ৩লাখ ৮২হাজার হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মো. সেলিম নামে নামে এক ওমান প্রবাসী। তার বাড়ি চট্টগ্রাম শহরের হালিশহর এ-ব্লকে। অন্যদিকে সাদিয়া রহমান বৃষ্টির পিতার নাম নাসির উদ্দীন। ওই প্রবাসীকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে এই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বৃষ্টি নামে ওই তরুণী। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিয়ের করা অস্বীকার করে প্রবাসী সেলিমের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বৃষ্টি। এই ঘটনাটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছে প্রবাসী সেলিশ এবং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই শিগগিরই তিনি দেশ আসবেন।

ঘটনার শুরু: প্রথমে ‘রং নাম্বারে’ বার বার কল। প্রচন্ড বিরক্ত হলেন প্রবাসী সেলিম। বার বার রং নাম্বার বলে শাসানো হলেও নাছোড়বান্দা তরুণী বৃষ্টি। এক পর্যায়ে রং নাম্বার থেকেই হয় নতুন পরিচয়। আস্তে আস্তে নানা কৌশলে কাছে আসা। এক পর্যায়ে তরুণী বৃষ্টি দিয়ে বসে প্রেমে প্রস্তাব। কিন্তু তাতেও পাত্তা দেয়নি প্রবাসী সেলিশ। তারপরও হাল ছাড়েনি বৃষ্টি! শেষে নিজের অসহায়ত্বের টোপ দিয়ে গলিয়ে ফেলে প্রবাসী সেলিমের মন। এভাবেই শুরু হয় এক ওমান প্রবাসী সেলিমের সাথে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর আদর্শ গ্রামের তরুণী বৃষ্টির প্রতারণার ফাঁদ! প্রতারণার মাধ্যমে নানা কূটকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে ৩লাখ ৮০ হাজার টাকা।

ঘটনার সূত্র: ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ওমান থেকে ছুটিতে দেশে আসেন প্রবাসী সেলিম। তিনি ছুটি শেষে ওমান ফিরে যাওয়ার কাছাকাছি সময়ে একদিন একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে তার মুঠোফোনে কল। ওপাশে ছিলো এক মেয়ে। মেয়েটি কল করে একজনকে খোঁজেন। কিন্তু তিনি সেই জন না হওয়ায় রং নাম্বার বলে কল কেটে দেন িেসলম। তারপরও বার বার কল করতে থাকে বৃষ্টি। প্রতিবার রং নাম্বার বলে কল কেটে দেন সেলিম। এ পর্যায়ে রং নাম্বারের কথা মেনে নিয়ে বৃষ্টি সেলিমের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে সায় দেননি সেলিম। তারপরও বার বার কল দিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে মোহনীয় সুরে নানা মনভোলানো আলাপ জুড়ে দেয় বৃষ্টি। এভাবে কয়েকদিন নিয়মিত কথা হয়। এক পর্যায়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসেন মেয়েটি। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেন প্রবাসী সেলিম। শেষে নিজেকে অনেক অসহায় বলে তুলে ধরেন বৃষ্টি। এভাবে লাগাতার নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে এক পর্যায়ে প্রবাসী সেলিমের মন গলিয়ে ফেলে।

                 প্রবাসী সেলিমের পাঠানো টাকা ‘বৃষ্টি’ নামে স্বাক্ষর করে বিকাশ থেকে  তুলেছেন বৃষ্টি।

কিছুদিনের মধ্যে মো. সেলিম ওমান চলে যাওয়ার পরও মোবাইল ফোনে আলাপ অব্যাহত থাকে। ইতিমধ্যে মেয়েটিকে পারিবারিক পরামর্শ মতে বিয়ে প্রস্তাব দেন প্রবাসী সেলিম। প্রস্তাবে রাজি হন বৃষ্টিও।

এ ব্যাপারে প্রবাসী মো. সেলিম বলেন, মেয়েটির অসহায়ত্বের কথা জেনে আমি তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ি। তাই পরিবারের সাথে আলাপ করে তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিই। তার অসহায়ত্ব আমাকে খুব ঘায়েল করেছে। সে কালো কিংবা অসুন্দর যাই হোক, আমি তাকে না দেখেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। সে প্রস্তাবও গ্রহণ করে নেয়। এতে তাকে আরো আপন করে নিই। স্থান দিই নিজের পরিবারের একজন হিসেবে।

মো. সেলিম আরো বলেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে বৃষ্টি এক পর্যায়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফন্দি করে। সে নানা অজুহাত দিয়ে আমার কাছে টাকা চাইতে থাকে। যেহেতু তার সাথে আমার বিয়ে হবে তাই আমিও তার চাহিদা মাফিক টাকা চাওয়ার সাথে সাথে পাঠিয়েছি। টাকা পাওয়ার জন্য সে কোরআনের কসম, মায়ের কসমসহ নানাভাবে শপথ করতো। কখনো পরিবারের অভাব, নিজের পড়ালেখার খরচ, হোস্টেল খরচ, মোবাইল কেনা, জামা-কাপড় কেনা- এমনকি তার ছোটভাইয়ের পড়ার খরচের কথা বলেও সে আমার কাছে টাকা চেয়েছে। কোনটাতেই আমি কখনো না করিনি। টাকা চাওয়ার সাথে সাথে পাঠিয়েছি। সে স্থানীয় বিকাশ এজেন্টের নাম্বার দিতো আমি টাকা পাঠাতাম। ২০১৬সালের ২২জুন থেকে থেকে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ পর্যন্ত তাকে আমি বিভিন্ন কিস্তিতে ৩লাখ ৮২ হাজার টাকা দিয়েছি।

প্রবাসী সেলিম জানান, অভিযুক্ত সাদিয়া রহমান বৃষ্টি চলতি বছর দাখিল পরীক্ষার্থী ছিলো। দাখিল পরীক্ষার দেয়ার পর বিয়ের কথা বলায় সে প্রবাসী সেলিমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। যোগাযোগ বন্ধ দেয়ার পর বৃষ্টি বাড়িতে মানুষ পাঠায় প্রবাসী। খোঁজ নিয়ে বৃষ্টির আসল পিতার পরিচয় পাওয়া যায়। কেননা বৃষ্টি সেলিমেক বলেছিল তার পিতার নাম নূরুল ইসলাম। কিন্তু তার পিতার নাম নাসির উদ্দীন এবং মায়ের নাম নূরুন্নাহার।

এরপর বৃষ্টির আরো কিছু প্রতারণা ফাঁস হয়ে যায়। মেয়েটি অন্যছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়েছে। ছেলেটিও ওই এলাকার। সে পুরো তিন বছরে ১৩ সিম বদল করেছে এখন সব সিম বন্ধ করে দিয়েছে। একটি নাম্বার কয়েক মাস পর ফেলে দেন। আরেকটি নতুন নাম্বার নেয়। এর কারণ জানতে চাইলে বলে- মোবাইল হারিয়ে গেছে, বাড়িতে চোর ঢুকে মোবাইল নিয়ে গেছে- বলে বলতো। মূলত এটাও প্রতারণার একটি অংশ ছিলো বলে মনে করছেন সেলিম।

প্রবাসী সেলিম বলেন, ‘মূলত ওই মেয়েটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে আমার সাথে সম্পর্ক করেছিল। কিন্তু আমি সরলমনা মানুষ বলে তাকে বিশ্বাস করেছি। আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমার এতগুলো টাকা খেয়ে সে এখন যোগাযোগ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আমার অনেক কষ্টে রোজগার করা টাকা। সে আমাকে বিয়ে না করলেও সমস্যা নেই আমি আমার টাকা ফেরত চাই। টাকা উদ্ধারের জন্য মামলা-মোকাদ্দমাসহ যা যা দরকার সব করবো।

এ ব্যাপারে জানতে চেষ্টা করেও সাদিয়া রহমান বৃষ্টি বা তার পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

পাঠকের মতামত: